শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২১ পূর্বাহ্ন
মো: মোত্তাকিম হোসেন (লাভলু) :এমন কিছু মূর্তি তৈরি হয়েছে এখন অব্দি পৃথিবীতে যারা সব সমস্যাকে পেরিয়ে, সব বাঁধাকে হারিয়ে এখনো পর্যন্ত টিকে আছে স্বমহিমায়, নিজেদের অনন্যতা আর ভিন্নতার মাধ্যমে। এমনই কিছু বিখ্যাত ও অদ্ভূত মূর্তিকে।
দাই বাদান্দে বা দ্যা বাথার
বাথটাবে কোন নারীকে পুরোটা শরীর ডুবিয়ে গোসল করার দৃশ্যটা বেশ স্বাভাবিক আর সহজেই মাথাতেও আসবে আপনার। কিন্তু সেই বাথটাবের আয়তন আর কতটাই বা হবে! একবার ভাবুন তো কেমন হবে যদি সেই বাথটাবের আয়তন হয় বিশাল একটি খালের সমান? সত্যিই এমনটি হয়েছিল জার্মানির হামবার্গের ইনার আলস্টার লেকের পানিতে। দশ দিনের জন্য এই লেকে একটি মূর্তি স্থাপন করা হয় যেখানে একজন নারীকে দেখা যায় লেকের পানিতে শরীর ডুবিয়ে বসে থাকতে। ২ টন ওজনের এই মূর্তিটির নাম এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ কোম্পানি গ্লোরি রেখেছিল দ্যা বাথার (লিস্টভার্স)। আদতে সত্যিই এমন একটি নামই কেবল মানানসই হতে পারে মুখ আর দুই হাঁটুর খানিকটা বের করে রাখা এই নারী স্থাপনাটির জন্য। নিজেদের নতুন পণ্যের নাম সবার কাছে ছড়িয়ে দিতেই এত বিশাল একটা কাজে হাত দিয়েছিল গ্লোরি। তাদের এই কাজে নিজের মেধাকে যোগ করে ভিন্নমাত্রা দিতে সাহায্য করেছিলেন স্থাপত্যশিল্পী অলিভার ভস। এখন যদিও আর নেই, তবুও তখন থেকে আজ পর্যন্ত সবার মনে গেঁথে রয়েছে দ্যা বাথার বেশ ভালোভাবেই।
জিমি কার্টার পিনাট
শুনশান নির্জন এক আলো-আঁধারে মোড়া একটি স্থান দিয়ে যাচ্ছেন আপনি। হঠাৎ আপনার সামনে পড়ল একটা বাদাম। দাঁত বের করে হাসতে থাকা চোখহীন বাদাম। তাও আবার যার উচ্চতা ১৩ ফুট লম্বা! কেমনটা লাগবে আপনার তখন? ভাবতেই গা শিউরে উঠলেও বাস্তবে জিমি কার্টারের রাষ্ট্রপতি হওয়ার আনন্দেই তৈরি হয়েছিল এই পিনাট মূর্তিটি। তখন এটি ইন্ডিয়ানাতে তৈরি হলেও বর্তমানে রয়েছে জর্জিয়ায়। এখন নিশ্চয় আপনার জানতে ইচ্ছা করছে কেন রাষ্ট্রপতি হওয়ার আনন্দে আর সবকিছুকে বাদ দিয়ে বাদামকেই বেছে নিল সবাই? আসলে রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে কার্টার ছিলেন একজন বাদাম চাষী। আর তাই সেটাকে মাথায় রেখেই এই স্থাপনাটি নির্মান করেন সমর্থকেরা।
ব্রাউনোসারস
প্রাগের ফিউচুরা গ্যালারীতে কি গিয়েছেন কখনো? যদি না গিয়ে থাকেন তাহলে ব্রাউনোসারস হতে পারে প্রাগে ঘুরতে যাওয়া নিয়ে আপনার মনে জমা করা অভিজ্ঞতাগুলোর ভেতরে অন্যতম হাস্যকর আর অন্যরকম অভিজ্ঞতা। ব্রাউনোসারস স্থাপত্যটি মূলত মানুষের পশ্চাৎভাগকে ইঙ্গিত করে তৈরি করা। মোট দুটি মূর্তি আছে এখানে যারা কিনা দেয়ালের ভেতরে দিয়ে অন্যপাশে দেখবার জন্যে বাঁকা হয়ে আছে। দুটো স্থাপত্যেরই পেছনভাগে মই লাগানো আছে। আপনি ইচ্ছে করলেই মইয়ে চড়ে সেগুলোতে একবার করে উঁকি মেরে আসতে পারেন।
দ্যা কিস
স্থাপত্যকর্মের সারিতে যে শিল্পগুলো খোলামেলাভাব আর ভালোবাসার উদ্দাম বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বছরের পর বছর ধরে মানুষের সামনে দৃষ্টান্ত রেখে চলেছে আর হয়ে উঠেছে প্রতিনিয়ত জনপ্রিয়, তাদের ভেতরে অন্যতম হচ্ছে অগিস্তো রোঁদার বিখ্যাত মার্বেল পাথরের স্থাপত্য- দ্যা কিস। পাথরের কর্কশ বুককেও যে জাদুকরী হাতের ছোঁয়ায় অনুভূতির সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে যাওয়া যায় সেটাই পৃথিবীবাসীর সামনে তুলে ধরেছেন রোদা। রোঁদার জীবদ্দশায় তিন তিনটি মার্বেল পাথরের দ্যা কিস স্থাপত্য নির্মিত হয়। বর্তমানে যার ভেতরে সাদা পাথরের সবচাইতে জনপ্রিয়টি অবস্থান করছে প্যারিসের মুসে রোদা জাদুঘরে। মোট মিলিয়ে দ্যা কিস মোট তিনবার তৈরি করেছিলেন রোদা তার জীবদ্দশায়। তবে সবচাইতে অদ্ভূত ব্যাপার হচ্ছে এটা যে, দ্যা কিস তৈরির ধারনা শিল্পী পেয়েছিলেন আর কোথাও নয়, বরং নরকে। নিজের স্বপ্নে নরক আর নরকে বসবাসরত দ্যা কিসের দুই পাত্র-পাত্রীকে দেখেছিলেন বলে মনে করতেন রোদা।
দ্যা হেডিংটন শার্ক
ইংল্যান্ডের এই মূর্তিটিকে এক নজরে দেখলে হয়তো নিজের চোখকে নাও বিশ্বাস করতে পারেন আপনি। মূর্তিটি এতটাই জীবন্ত যে একে দেখে অবাক হয়ে ছোটখাটো দূর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলা খুব একটা বাড়াবাড়ি কিছু হবেনা। এতে একটি হাঙর একটি বাড়ির ছাদের ওপর উড়ে এসে পড়েছে এবং তার মাথা বাড়ির ছাদ ভেঙে খানিকটা ভেতরে চলে গিয়েছে। মূলত, নাগাসাকিতে আমেরিকার বোমা বিস্ফোরনের প্রতিবাদেই এমন মূর্তি তৈরি করেছিলো এর নির্মাতারা (দি রিচেস্ট )।